You are currently viewing গারনেট পাথর(Garnet Stone)
natural garnet stone price

গারনেট পাথর(Garnet Stone)

natural garnet stone price

গারনেট পাথর কি ?

মহান আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে যত নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে একটি মূল্যবান নেয়ামত হলো রত্ন পাথ। রত্ন পাথরের গুনাগুন সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন, “আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন আকাশমণ্ডলী পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে তো রহিয়াছে নিদর্শন” ( সূরা আল জাজিয়া আয়াতঃ১৩) এসব রত্ন পাথরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য রত্ন পাথর হল গারনেট পাথর। শুরুতেই জেনে নেয়া যাক গারনেট  পাথর কি? 

এটি মূলত একটি প্রাকৃতিক রত্ন পাথর।  এই পাথর সাধারণত লাল রঙের হয়ে থাকে। সেই সাথে গারনেটের বিভিন্ন প্রজাতি ও  লক্ষ্য করা যায়।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল  pyrope , almandine , spessartine , grossular ,uvarovite এবং andradite । মোহস স্কেলে পাথরটির কঠোরতা সাধারণত  ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হয়ে থাকে। যা এটিকে টেকসই করে তোলে এবং বিভিন্ন অলঙ্কারে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। 

 

গারনেট পাথরের ইতিহাস

গারনেট পাথরের একটি সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধশালী ইতিহাস রয়েছে। এই  ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিস্তৃত । ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে বিস্তৃত গল্প কথা । চলুন প্রাচীনকালে গারনেট পাথরের ব্যবহারের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

প্রাচীন মিশরঃ ইতিহাস এবং সভ্যতার পণ্যভূমি বলা হয় মিশরকে । মিশরে রয়েছে প্রাচীন সব পিরামিড। সকল পিরামিডের ইতিহাস এবং তৈরির পিছনে  বিতর্কিত সব কারণ থাকলেও গারনেট পাথরের ব্যবহার নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।  প্রাচীন মিশরের  রত্ন পাথরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল গারনেট।তৎকালীন মিশরীয়রা এই পাথর সাধারণত অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত। তারা বিশ্বাস করত এই পাথর সমৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে শান্তি নিয়ে আসে। মিশরীয় ফারাওদের কাছেও এই পাথর বিশেষ মর্যাদার স্থান পেত ।

রোমান সাম্রাজ্যঃ তৎকালীন রোমান সম্রাজ্যে গারনেট আংটি এবং ব্রোচে ব্যবহৃত হত বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়।এছাড়াও এই পাথর  উৎকৃষ্ট কাস্টারিং এবং খোদাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো।রোমানদের অন্যতম অলংকার হিসেবে গারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

গ্রীক সভ্যতাঃ অন্যান্য সভ্যতার মতো গ্রীক সভ্যতাতেও গারনেট পাথরের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।গিরিক পুরানে গারনেটকে প্রেম এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । গিরিকবাসীরা বিশ্বাস করতগারনেট সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ততা এবং ভালোবাসা অটুট রাখতে সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করে ।তাই তৎকালীন সময়ে প্রেম নিবেদন কিংবা বিয়েতে গারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। 
প্রাচীন কালের মতো মধ্যযুগেও গারনেটের ব্যবহার ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়।

মধ্যযুগের ইউরোপঃ মধ্যযুগে ইউরোপের মানুষেরা বিশ্বাস করত গারনেট পাথর  রক্ত পরিষ্কার করতে পারে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। খ্রিস্টান যোদ্ধারা (নাইটরা) এবং তৎকালীন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা গারনেট পাথর তাদের পোশাক এবং অস্ত্রের সাথে ব্যবহার করতেন। বিশ্বাস করত এই পাথর তাদের সব ধরনের অপশক্তির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে। 

আধুনিক যুগঃ আধুনিক যুগে এসে গারনেট পাথরের চাহিদা পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। আধুনিক কালে মানুষ মূলত এই পাথর সৌভাগ্যের প্রতীক এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে অলংকার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।এই পাথরের উজ্জ্বলতা যে কোন কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। বর্তমানে এই পাথর উচ্চ মানের গহনা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই পাথর ব্যবহার করে তারা অর্থনৈতিক এবং শারীরিকভাবে উন্নত লাভ করেছেন।
গারনেট পাথর বিভিন্ন যুগে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শুধু একটি সুন্দর মূল্যবান রত্ন পাথরেই নয়। এই পাথর বিভিন্ন সভ্যতা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ,বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক হিসাবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

গারনেট পাথরের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ

চলুন প্রথমে গারনেট পাথরের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।রাসায়নিক গঠন ,রঙ্গের বৈচিত্র্যতা, এবং মূল্যের দিক থেকে গারনেট পাথরকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

পাইরোপ গারনেট (Pyrope Garnet) – পাইরোপ গারনেট সাধারণত গাঢ় লাল থেকে কালো রঙ্গের হয়ে থাকে ।প্রাচীন যুগে পাইরোপ ‘কার্বুনকেল’ নামে পরিচিত ছিল।বর্তমান যুগে এই পাথরের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । 

আলমান্ডাইন গারনেট (Almandine Garnet) – গারনেটের এই শ্রেণি সাধারণতগাঢ় লাল থেকে বেগুনি লাল হয়ে থাকে।গারনেট শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এই পাথর সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।এবং এটি অন্যান্য পাথরের তুলনায় বেশ শক্ত হয়ে থাকে। তাই গারনেট ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায় আলমন্ডাইন গারনেট পছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকে।   

স্পেসারটাইন গারনেট (Spessartine Garnet) – এটি মূলত কমলা থেকে লাল এবং বাদামী হয়। অন্যান্য শ্রেণীর তুলনায় এই শ্রেণীর গারনেট সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকে । 

গ্রোসুলার গারনেট (Grossular Garnet) – এই শ্রেণীর গারনেটের রং হালকা সবুজ থেকে হলুদ এবং কমলা হয়।গ্রোসুলার গারনেটকে ‘টসাইট’ নামেও ডাকা হয়  এবং এই শ্রেণীর পাথরে সবচেয়ে বেশি রঙের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় । 

আন্ড্রাডাইট গারনেট (Andradite Garnet) – এর রং সাধারণত সবুজ, হলুদ এবং কালো কিংবা ধূসর কালো হয়ে থাকে।

উভারোভাইট গারনেট (Uvarovite Garnet) – উভারোভাইট গারনেটের শুধু একটা মাত্র রং দেখা যায় গাঢ় সবুজ। উভারোভাইট তার সবুজ রঙের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত তাই এর চাহিদাও অন্যান্য পাথরের চেয়ে অনেক বেশি। 

ডেমন্তয়েড গারনেট (Demantoid Garnet) – এটি সাধারণত উজ্জ্বল সবুজ রঙের হয়ে থাকে।গারনেট শ্রেণীভুক্ত পাথরের মধ্যে ডেমন্তয়েড গারনেট  সবচেয়ে মূল্যবান ও বিরল প্রকৃতির গারনেট।এই প্রকৃতির গারনেট সচরাচর পাওয়া যায় না তাই এর চাহিদা ও আকাশচুম্বী।

এবার চলুন গারনেট পাথরের কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক

রঙঃ গারনেট পাথরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসবে সেটি হলো এর বৈচিত্র্যময় রঙ। এখন পর্যন্ত লাল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বাদামী, কালো, এবং নীল রঙের গারনেট পাওয়া গেছে। এর বৈচিত্রময় রং যে কোন কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

কঠোরতাঃ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে মোহস স্কেলে গারনেটের কঠোরতা ৬.৫ থেকে ৭.৫ পর্যন্ত পাওয়া গেছে । যা এই পাথরকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তুলেছে। টেকসই হওয়ায়  দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই পাথর পুরোপুরি উপযোগী। 

প্রান্তিকতাঃ সবচেয়ে মজার বিষয় হলো গারনেট পাথরের আকার খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায়।তাই এটি দিয়ে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের অলংকার তৈরি করা সম্ভব।গারনেটের  এই বৈশিষ্ট্য ক্রেতাকে  বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে থাকে।

প্রকাশভঙ্গিঃ গারনেট পাথরের স্বচ্ছতা ও দীপ্তি যেকোনো ব্যক্তিকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো এই পাথরের  উজ্জ্বলতা ও রঙের গভীরতা এতটাই বেশি যে  সূর্যালোক বা কৃত্রিম আলোর নিচেও এর উজ্জ্বলতা  লক্ষ্য করা যায়।

 গারনেট পাথরের চেনার উপায়:একটি নিখুঁত গারনেট  কেনার কৌশলবিস্তারিত

গারনেট পাথরের গোপন শক্তিঃবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সহ জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষমতা-বিস্তারিত

কোন কোন রাশির জন্য গারনেট ব্যবহার সুফলদায়ক-বিস্তারিত

Leave a Reply