সৌন্দর্যের দিক বিবেচনায় পৃথিবীতে যে কয়টি রত্ন পাথর রয়েছে তার মধ্যে নীলা অন্যতম।ইংরেজিতে নীলাকে “Blue Sapphire” নামে ডাকা হয়। এটি মূলত খনিজ করুন্ডাম (Corundum) থেকে উদ্ভূত একটি রত্ন পাথর।মন জুড়ানো সৌন্দর্য এবং উপকার যত্ন পাথর হিসেবে নীলার সমকক্ষ খুব কম পাথরই রয়েছে।
নীলা রত্ন পাথরের প্রকারভেদঃ
নীলা রত্ন পাথরের উৎস,রঙ এবং গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।চলুন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
বার্মিজ নীলা (Burmese Sapphire):
পৃথিবীর উৎকৃষ্ট মানের নীলা পাওয়া যায় মায়ানমার বা বার্মায়। এখানে প্রাপ্ত নীলা গুলো বার্মিজ নীলা নামে পরিচিত।এই নীলা গুলো স্বচ্ছ রঙের জন্য বিখ্যাত।
শ্রীলঙ্কান নীলা (Ceylon Sapphire):
পৃথিবীর রত্ন ভান্ডার খ্যাত শ্রীলঙ্কায় প্রাপ্ত নীলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।এখানে প্রাপ্ত নীলা শ্রীলঙ্কান নীলা বা Ceylon Sapphire নামে পরিচিত।
অস্ট্রেলিয়ান নীলা (Australian Sapphire):
অস্ট্রেলিয়ান নীলা পাথর তুলনামূলকভাবে কম দামি এবং ধূসর আভা যুক্ত হয়ে থাকে।এখানে প্রাপ্ত নীলা গুলো ধূসর এবং অস্বচ্ছ প্রকৃতির হয়ে থাকে।
মাদাগাস্কার নীলা (Madagascar Sapphire):
দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার থেকে প্রাপ্ত নীলা উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে।মনমুগ্ধকর উজ্জ্বল রঙের জন্য জন্য সাম্প্রতিক সময়ে মাদাগাস্কারের নীলা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কাশ্মীরী নীলা (Kashmir Sapphire):
কাশ্মীরি নীলা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এবং দুর্লভ প্রকৃতির নীলা পাথর। এর গভীর এবং উজ্জ্বল রঙ যে কোন নীলা পাথরের চেয়ে আলাদা।
নীলা রত্ন পাথরের উপকারিতা (Benefits of Nila Rathno):
প্রতিটি রত্ন পাথর কোন না কোন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।প্রতিটি রত্ন পাথরের রয়েছে বিশেষ উপকারিতা।রত্ন পাথর ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিখ্যাত ভারতীয় জ্যোতিষী স্বামী শঙ্করচার্য বলেছেন- “সঠিকভাবে নির্বাচিত রত্নপাথর মহাজাগতিক শক্তির বাহক হিসেবে কাজ করে এবং মানুষের জীবনকে সহজ করে।” অন্যান্য রত্ন পাথরের মত নীলা পাথরেরও উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে নীলা পাথর ব্যবহারের উপকারিতা দেওয়া হলোঃ
- নীলাকে রক্ষা কবজ বলা হয়।এই পাথর শত্রুর কুদৃষ্টি ও হিংসা থেকে রক্ষা করে।
- কর্মস্থলে ব্যর্থতা, ব্যবসায় অবনতি,দাম্পত্য জীবনে অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে নীলা পাথর সাহায্য করে।
- পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে।
- মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য কর।
- সৃজনশীলতা এবং মনোযোগ ধরে রাখতে নীলা পাথর সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের উপর নীলা রত্ন পাথর রাখলে জ্বরের তীব্রতা হ্রাস পায়।
- নীলা রত্ন পাথর ব্যবহার অতি অল্প সময়ে দারিদ্রতা দূরীভূত হয় এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসে।
- মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষন্নতা কমাতে নীলা পাথর সাহায্য করে।
- শারীরিক অসুস্থতা এবং স্নায়বিক সমস্যা মোকাবেলায় নীলা পাথর সাহায্য করে।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলে।
- জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, নীলা পাথরের সাথে শনি গ্রহের সম্পর্ক বিদ্যমান। শনির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে এই পাথর সাহায্য করে।
- চিন্তা শক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নীলা পাথর সাহায্য করে।
- আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং মানসিক স্নিগ্ধতা আনতে নীলা পাথর সাহায্য করে।
- অন্তদৃষ্টি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
- জমিজমা সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমায় বিজয়ী হতে সাহায্য করে।
- চোখ এবং ত্বকের সমস্যা মোকাবেলায় এই রত্ন পাথর বেশ কার্যকারী।(তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোন জ্যোতিষীর পরামর্শ নিতে হবে।)
- ইতিবাচক চিন্তাধারার উদয় ঘটায়।
- জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করে।
নীলা রত্ন পাথর ব্যবহারের ইতিহাসঃ
নীলা পাথর ব্যবহারের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। বিভিন্ন সভ্যতা এবং সংস্কৃতিতে খুবই গুরুত্বের সাথে এই পাথর ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রাচীন ভারতঃ
প্রাচীন ভারতবর্ষে নীলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ রত্ন পাথর হিসেবে ব্যবহৃত হতো।তাদের বিশ্বাস ছিল যে,এই পাথর শনির ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।তৎকালীন ভারতবর্ষে অলংকার হিসাবেও নীলার বেশ কদর ছিল। প্রাচীন ভারতবর্ষে নীলা পাথর অভিজাত এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ইউরোপঃ
ইউরোপে নীলা রত্ন পাথর রাজা-মহারাজাদের গহনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রঙের বৈচিত্র্যের কারণে ইউরোপে নীলা পাথর গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হতো।
প্রাচীন মিশর:
প্রাচীন মিশরে ধন সম্পদের প্রতীক হিসেবে নীলা পাথর ব্যবহৃত হতো। পাশাপাশি তারা বিশ্বাস করত, এই রত্ন পাথর শুভ শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
কোন কোন রাশির জন্য নীলা পাথর ব্যবহার করা উচিত?
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে ,মিথুন,তুলা,কন্যা ও মকর রাশির জন্য নীলা পাথরকে বিশেষভাবে উপকারী মনে করা হয়।
মিথুন (Gemini):
এই রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য মানসিক শক্তি বৃদ্ধি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নীলা পাথর সাহায্য করে।
তুলা (Libra):
তুলা রাশির জন্য নীলা রত্ন পাথর সম্পর্ক উন্নতি করতে এবং সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কন্যা (Virgo):
ব্যক্তি জীবনে কর্মদক্ষতা,সমাধানমূলক চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে কন্যা রাশির জন্য নীলা রত্ন পাথর পাথর বেশ উপকারী।
মকর (Capricorn):
মকর রাশির জন্য নীলা পাথর ধৈর্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে যে, কোনো রত্ন পাথর ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই কোন অভিজ্ঞ জ্যোতিষী কিংবা রত্ন বিশারদের পরামর্শ নেয়া উচিত। কেননা কোন রত্ন পাথর কোন রাশির জন্য উপকারী তা একমাত্র অভিজ্ঞ কোন জ্যোতিষীর পক্ষেই বলা সম্ভব।
নীলা রত্ন পাথরের খনি বা উৎসঃ
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নীলা রত্ন পাথর যায়।নিম্নে পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকটি খনি সম্পর্কে বলা হলো:
শ্রীলঙ্কা:
শ্রীলংকার রত্নাপুরে পৃথিবীর বিখ্যাত নীলা পাথর পাওয়া যায়। এছাড়াও শ্রীলংকার এলাহারা,রাকওয়ানা অঞ্চলে নীলা রত্ন পাথরের খনি রয়েছে।
মিয়ানমার (বার্মা):
বার্মার মোগোক অঞ্চল নীলা পাথর উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।এখানে প্রাপ্ত নীলা খুবই উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হয়ে থাকে।
মাদাগাস্কার:
মাদাগাস্কার পৃথিবীর অন্যতম নীলা উৎপাদনকারী দেশ।
থাইল্যান্ড:
থাইল্যান্ডের চাঁতাবুরি অঞ্চল নীলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
কাশ্মীর, ভারত:
ভারতের কাশ্মীরে পৃথিবী বিখ্যাত এবং দুর্লভ নীলা পাওয়া যায়।এই নীলা গুলো খুবই গভীর উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে।
নীলা রত্ন পাথরের পরিচর্যাঃ
নীলা রত্ন পাথর সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করলে এর সৌন্দর্যতা এবং উজ্জ্বলতা দীর্ঘদিন অক্ষুন্ন থাকে।নিম্নে নীলা রত্ন পাথরের পরিচর্যার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:
- ব্লিচ, ক্লোরিন, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে নীলা পাথরকে দূরে রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত আলো থেকে নীলা পাথরকে দূরে রাখতে হবে।
- নীলা ব্যাপারে পূর্বে কোন ধরনের পারফিউম বা মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না।এগুলোর ক্ষতিকারক রাসায়নিক নীলার স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- নীলা রত্ন পাথরের সাথে কোন ভাবেই অন্য রত্ন পাথর রাখা যাবে না। এতে করে স্ক্রাচ পড়তে পারে।
- সর্বোপরি নির্দিষ্ট দিন পর পর অভিজ্ঞ কোন জ্যোতিষীর তত্ত্বাবধানে নীলা রত্ন পাথর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এবং কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধান করতে হবে।
আসল নীলা পাথর চেনার উপায়ঃ
- আসল নীলা গভীর নীল রঙের হয়ে থাকে।অন্যদিকে নকল পাথর হালকা এবং ধূসর নীল রঙের হয়।
- আসল নীলার আপেক্ষিক গুরুত্ব ৪.০৬ এবং মোহস কঠোরতার মান ৯। পক্ষান্তরে নকল নীলার আপেক্ষিক গুরুত্ব তুলনামূলক খুবই কম হয়ে থাকে।এভাবে আপনি আসল এবং নকলের পার্থক্য করতে পারবেন।
- আসল নীলা পাথরে এক ধরনের উজ্জ্বলতা এবং দ্যূতি লক্ষ্য করা যায় । যাকে ” স্টার স্যাফায়ার” বলে। কিন্তু নকল পাথরে ” স্টার স্যাফায়ার” পাওয়া যায় না।
- আসল নীলা পাথরে তাপ দিলে এর রঙ বা গঠনের কোন ধরনের পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে নকল নীলা পাথরে তাপ প্রয়োগ করলে রঙের এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামোর পরিবর্তন হয়।
- তবে রত্ন পাথর কেনার পূর্বে প্রফেশনাল জেমোলজিস্ট বা রত্নবিশারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত মাধ্যম থেকে রত্ন পাথর ক্রয় করতে হবে। এক্ষেত্রে ধোঁকা বা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।
নীলা রত্ন পাথরের তৈরি গহনা আইডিয়াঃ
নীলা রত্ন পাথরে তৈরি গহনা,গহনা প্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।চলুন নীচে নীলা রত্ন পাথরের তৈরি কিছু গহনা আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেই।
নীলার আংটি:
আধুনিক গহনা প্রেমীদের কাছে নীলার আংটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নীলার কানের দুল:
নীলা পাথর দিয়ে স্টাড ইয়াররিং বা ড্রপ ইয়াররিং-এ কারুকার্য যোগ করে সুন্দর সুন্দর গহনা তৈরি করা যায়।
নীলার হার:
নীলার তৈরি হার দেশ আকর্ষণীয় এবং ক্লাসিক লুক দেয়।
নীলার ব্রেসলেট:
ছোট ছোট নীলা পাথর দিয়ে আকর্ষণীয় এবং ফ্যাশনেবল ব্রেসলেট তৈরি করা যায়। যা আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে।
নীলার টিকলি:
নীলা পাথরের টিকলি ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে।
তবে যে কোনো রত্ন পাথর ব্যবহারের পূর্বে পাথরটি আসল না নকল তা অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।কেননা নকল পাথর ব্যবহারে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আর রাশি ভেদে আপনার জন্য কোন রত্ন পাথর উপকারী তা একমাত্র অভিজ্ঞ কোন জ্যোতিষীর পক্ষেই বলা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য করতে পারেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী লিটন দেওয়ান চিশতী।তিনি বিগত ৩০ বছর যাবত নিষ্ঠা এবং সততার সহিত মানব সেবা করে আসছেন। হতাশ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি। দুঃখ দূর্দশা থেকে মুক্তি। পারিবারিক কলহ থেকে মুক্তি দৈব দূর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি। রাশিফল গণণার মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান । ব্যবসায়িক উন্নতি। লেখাপড়ায় অমনোযোগ। মানুষিক ও পারিবারিক অশান্তি । স্বামী স্ত্রী অমিল, সংসারে অশান্তিসহ সকল সমস্যার সমাধান পেতে জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতীর দর্শনে আসুন। পাশাপাশি কোন ধরনের ধোঁকা এবং প্রতারণা ছাড়াই আসল রত্ন পাথর ক্রয় করতে চলে আসুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রত্ন বিপণনী প্রতিষ্ঠান আজমেরী জেমস হাউজে। জ্যোতিষরাজ এবং আজমেরী জেমস হাউজের ঠিকানাঃ লেভেল -০১, ব্লক-ডি, দোকান নং-৭৩, ৭৪,৮৭,১০০, বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭৬৩৩৫৫০৯০, ০১৭১১৫৯৪০৮৮, ০১৭৭৭০০৩৩৮৮, ০১৭৭৭০০৩৩৪৪
ইমেইলঃ Email: info@ajmerigemshousebd.com